যশোর সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমে যেনো ভূতের আছর পড়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দলিলের জব্দ বালাম বই। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমির মালিকেরা। দীর্ঘদিন ধর্ণা দিয়েও তারা জমির দলিলের নকল পাচ্ছেন না।

ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, যশোর সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমে এখন ভর করেছে সিজ (জব্দ করা) বালাম আর মিসিং (হারিয়ে যাওয়া) বালামের ভূত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলিল প্রত্যাশীদের কাছ থেকে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। সাধারণ দলিলের নকল বাবদ ও সরকারি ফিস ছাড়া রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীকে দিতে হচ্ছে দলিল প্রতি দুইশ’ দশ টাকা ঘুষ। তিনি এই টাকা আদায় করছেন দলিল লেখকদের মাধ্যমে। এভাবে প্রতি সপ্তায় রেকর্ড রুম থেকে নকল সরবরাহ করা হয় সাতশ’ থেকে আটশ’ দলিল। এছাড়া, ছেঁড়া, কাটা বা সিজ বালামের নকল নিতে গেলে গুণতে হয় তিন হাজার টাকা। টাকা দিলে পাওয়া যায় সব রকম নকল। তা না হলে যেনো ভূতের আছর পড়ে রেকর্ড রুমে। খুঁজে পাওয়া যায় না দলিলের বালাম বই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখকরা জানান, জমির মালিকরা দলিলের নকল নিতে তাদের মাধ্যমে সরকারি ফিস (পৃষ্ঠা অনুযায়ী) ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা জমা দেন। কিন্তু রেকর্ড কিপারকে বাড়তি ২১০ টাকা ঘুষ না দিলে মামলা সংক্রান্ত বালাম বই জব্দ রয়েছে বা বালাম বই মিসিং হয়েছে, বালাম বই আদালতে পাঠানো হবে বা হয়েছে ইত্যাদি বলে ঘোরানো হয়।

এসব কারণে দিন দিন দলিল প্রত্যাশীদের হয়রানি বেড়ে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে কখনো কখনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। অনুসন্ধানে দেখা যায় ১৯৭০ সালের ১০৪৩১ নং দলিল, পৃষ্ঠা ১৯৯ থেকে ২০১, বালাম নম্বর ৯২, ১৯৮৪ সালের ৪০৭০ নং দলিল, পৃষ্ঠা ২৬২/২৬৪, বালাম নম্বর ৩১ ও ২০০০ সালের দলিল নং ১৩১১২, পৃষ্ঠা ১৬৯ থেকে ১৭২, বালাম নং ১৬৮ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ৩১ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে এ প্রতিবেদক রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর সাথে তার দপ্তরে যোগাযোগ করে কতগুলো বালাম বই আদালতে জব্দ বা মিসিং হয়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পূর্বের কোন বালাম বইয়ের তালিকা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের (নম্বর-৬৩৯০৮) কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফকরুল নামে এক দলিল লেখক জানান। গত ২ মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও তিনি এ দলিলের নকল পাচ্ছেন না। রেকর্ড রুম থেকে বলা হচ্ছে দলিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অপরদিকে, রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সরকারি ফিস ছাড়া বাড়তি ২১০ টাকা ঘুষ নেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ টাকা অফিসের বড় কর্মকর্তাসহ আমরা সবাই ভাগ বাটোয়ারা করে নেই’।

দলিল লেখকরা এ ব্যাপারে তদন্তের দাবি করে বলেছেন, ভূতের আছরে আটকা পড়া বালাম বই খুঁজে পাওয়া না গেলে যে কোন সময় জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। কারণ ওই সব বালাম বইয়ে শ’শ’ মানুষের দলিল জব্দ করা রয়েছে।
সূত্রঃ গ্রামের কাগজ